বিগ্রহ কি? শ্রীকৃষ্ণের কোন রূপের বিগ্রহ আরাধনা করা উচিত?

বিগ্রহ কি? শ্রীকৃষ্ণের কোন রূপের বিগ্রহ আরাধনা করা উচিত?

বিগ্রহ হচ্ছে মন্দিরে বা গৃহে বিরাজিত ভগবানের শ্রীমূর্তি, যার মাধ্যমে আমরা জড়জগতে থেকেও ভগবানকে দর্শন ও তাঁর সেবা সম্পাদনে সমর্থ হতে পারি।

ভগবদ্ভক্তিময় সেবা বা ভজনের নয়টি নির্ধারিত অঙ্গ রয়েছেঃ শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ, সেবা (পাদসেবন), পূজা (অৰ্চনা), সবকিছু শ্রীকৃষ্ণকে সমর্পণ ইত্যাদি । এইভাবে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহ-রূপে প্রকটিত হন, যাতে করে উপরোক্ত সেবা অনুশীলনের দ্বারা আমরা তাঁর আরাধনায় সমর্থ হই, এইভাবে শুদ্ধতা লাভ করি এবং সম্পূর্ণ কৃষ্ণভাবনাময় হয়ে আমাদের আপন আলয় ভগবদ্ধামে ফিরে যেতে পারি।

Lord Krishna

বিগ্রহ-আরাধনার যুক্তি ও দর্শনতত্ত্ব

বিগ্রহ হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের অনুমোদিত প্রতিভূ, যাকে বলা হয় অৰ্চা-বিগ্রহ । এই অর্চা-বিগ্রহ হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবানের এক অবতার । বাজার থেকে কিনে আনা যেকোন মূর্তি আমরা পূজা করতে পারি না, সেই চেষ্টা নিষ্ফল, কেননা সেটি অর্চা-বিগ্রহ নয় ।

অৰ্চা-বিগ্রহ হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এক মূর্তি, যা শাস্ত্র-নির্ধারিত উপাদানে নির্মিত এবং শাস্ত্রবিধি অনুসারে একজন শুদ্ধভক্তের দ্বারা যার স্থাপনা ও প্রাণ-প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

তাঁর শুদ্ধ ভক্তের আহ্বানে পরমেশ্বর ভগবান এইরকম এক শ্রীমূর্তিতে এসে বিরাজ করতে ও ভক্ত প্রদত্ত নিবেদিত দ্রব্যাদি গ্রহণ করতে সম্মত হন। যদি যথোচিত বিধিনিয়ম অনুসারে এইরকম কোনো শ্রীবিগ্রহের সেবা-পূজা করা হয়, তাহলে তা দ্রুত উন্নতি লাভের সহায়ক হয় । কেবল এইরকম শ্রীমূর্তিকে প্রামাণিক অর্চা-বিগ্রহ বলা যেতে পারে।

শ্রীকৃষ্ণের রূপ বর্ণনাঃ

পরমপুরুষ ভগবানের নিত্য শাশ্বত রূপ শাস্ত্রসমূহে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ

বেণুং ক্বণন্তমরবিন্দদলায়তাক্ষং
বর্হাবতংসমসিতাম্বুদসুন্দরাঙ্গম্ ।
কন্দর্পকোটিকমনীয় বিশেষশোভং
গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি।।
ব্রহ্মসংহিতাঃ শ্লোক-৩০

অর্থাৎ "মুরলীগান-তৎপর, কমলদলের ন্যায় প্রফুল্ল-চক্ষু, ময়ূর-পুচ্ছ শিরোভূষণ, নীলমেঘবর্ণ সুন্দর-শরীর কোটি-কন্দর্পমোহন বিশেষ শোভা-বিশিষ্ট সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজন করি।"

গোলোকে বিরাজিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অনুপম পরমাদ্ভূত রূপ-শোভা উপরোক্ত শ্লোকে বর্ণিত হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণের এই দিব্য অনবদ্যরূপে কোন জাগতিক সৌন্দর্য মনশ্চক্ষে দেখে তা থেকে কল্পনায় বিরচিত কিছু নয়। প্রামাণিক বহু শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণের এই নিত্য রূপ বর্ণিত হয়েছে, যেমনঃ

আলোলচন্দ্ৰক লসদ্বনমাল্যবংশী -
রত্নাঙ্গদং প্রণয়কেলিকলাবিলাসম্ ।
শ্যামং ত্রিভঙ্গললিতং নিয়তপ্রকাশং
গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি।। 
ব্রহ্মসংহিতাঃ শ্লোক ৩১

অর্থাৎ "দোলায়িত চন্দ্ৰক-শোভিত বনমালা যাঁর গলদেশে, বংশী রত্নাঙ্গদ, যাঁর করদ্বয়ে, সর্বদা প্রণয়কেলি-বিলাসযুক্ত যিনি ললিত-ত্রিভঙ্গ, শ্যামসুন্দর রূপই যাঁর নিত্য প্রকাশ, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।"

শ্রীকৃষ্ণের শ্রীমূর্তি বা বিগ্রহের রূপ উপরের বর্ণনার অনুরূপ । ভগবানের শ্রীবিগ্রহ সুন্দর, তিনি মুরলীধর এবং তিনি ত্রিভঙ্গ-ভঙ্গিমায় দণ্ডায়মান । শ্রীবিগ্রহের এই সকল বৈশিষ্ট্যই শাস্ত্র-নির্ধারিত। সুতরাং কেউই স্বকপোল-কল্পিত কোন রূপের মূর্তিকে পূজা করতে পারে না- তা শাস্ত্রবিরুদ্ধ । বিগ্রহ শাস্ত্রানুগভাবে নির্মিত হওয়া উচিত এবং পরম্পরা ধারায় আগত কোনো শুদ্ধ ভক্তের দ্বারা ঐ বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত।

সুত্রঃ ভগবদগীতার সারতত্ত্ব
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url