Jagannath Puri "জগন্নাথ-পুরী" কী কী নামে পরিচিত; জগন্নাথ-পুরীর বিভিন্ন নাম জেনে নিন...
"জগন্নাথ-পুরী" কী কী নামে পরিচিত; জগন্নাথ-পুরীর বিভিন্ন নাম জেনে নিন...
ভারতে চারটি মুখ্য ধাম আছে। চারটি ভিন্ন ভিন্ন যুগে ভারতভূমির চার দিকে ভগবান তাঁর মহিমাময় লীলাবিলাস সম্পাদন করেছিলেন। সত্যযুগে তিনি উত্তর ভারতের বদরীনাথে শ্রীনারায়ণ রূপে আবির্ভূত হন। ত্রেতাযুগে তিনি দক্ষিণে রামেশ্বর শ্রীরামচন্দ্র রূপে লীলাবিলাস করেন। দ্বাপরযুগে তিনি শ্রীদ্বারকানাথ রূপে প্রকটিত হন। এই তিন যুগের সব বারেই তিনি নররূপে আবির্ভূত হয়ে লীলাপ্রকট করেন। কলিযুগে তিনি পুরীধামে ভগবান শ্রীজগন্নাথরূপে বিগ্রহ-মূর্তিতে প্রকটিত হয়েছেন।
এই যুগের মানুষের জন্য শ্রীজগন্নাথ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চার ধামের মধ্যে জগন্নাথ পুরী সর্বাপেক্ষা মহত্তম। অন্য সব ধাম পরিদর্শনের পর তীর্থভ্রমণের পূর্ণ ফল পেতে অবশ্যই জগন্নাথ পুরীধাম পরিদর্শন করতে হয়।
একটি প্রবাদ আছে, “ভগবান বদ্রীনাথ বদ্রীধামে স্নান করেন। দ্বারকাধামে তিনি পোশাক পরিধান করেন। পুরীধামে তিনি ভোজন করেন এবং রামেশ্বরে ভগবান নিদ্রা যান।”
পুরীধাম বহুবিধ নামে পরিচিত। যেমন, শ্রীক্ষেত্র, পুরুষোত্তম ক্ষেত্র, নীলাচল ধাম, জগন্নাথ ধাম, সমানীক তীৰ্থ, উড্ডীয়ান পীঠ, মর্ত্য বৈকুণ্ঠ, নীলগিরি, নীলাদ্রি, শঙ্খ ক্ষেত্র, ভূস্বর্গ এবং নৃসিংহক্ষেত্র।পুরী ধামঃ
পুরী শব্দের অর্থ হচ্ছে বসবাসের স্থান। যিনি পুরী ধামে বাস করেন, তাকে বলা হয় পুরুষ। শ্রীজগন্নাথ হচ্ছেন পরমপুরুষ। পুরীধাম এমন এক স্থান যেখানে পরমপুরুষ ভগবান বাস করেন। শ্রীজগন্নাথের উপস্থিতির কারণে এখানকার সবকিছুই পূর্ণ।
পুরুষোত্তম ক্ষেত্রঃ
পুরীধাম পুরুষোত্তম ক্ষেত্র নামে খ্যাত। শ্রীজগন্নাথ হচ্ছেন পুরুষোত্তম। এই স্থানের প্রতি অত্যন্ত প্রীতিশীল হয়ে তিনি তাঁর নিজ নামানুসারে এই স্থানের নামকরণ করেন। এই ধাম স্বয়ং ভগবান হতে অভিন্ন।
ভূস্বর্গঃ
পুরী ধাম এই ধরণীর স্বর্গ নামে খ্যাত।
শ্রীক্ষেত্রঃ
এই স্থান যদিও বিষ্ণুর ক্ষেত্র, তবুও এই দিব্য স্থান লক্ষ্মীদেবীর দ্বারা প্রভাবান্বিত। গৌড়ীয় বৈষ্ণব সিদ্ধান্ত অনুসারে পুরীধাম শ্রীমতী রাধারাণীর মাধুর্যভাবের দ্বারা সম্পৃক্ত, অনুরঞ্জিত।
শঙ্খ ক্ষেত্রঃ
পুরীধামের ভৌগোলিক আয়তন শঙ্খের মতো। উড়িষ্যার পবিত্র ভূমি চারটি ক্ষেত্রে বিভক্ত। এই ক্ষেত্রগুলির নামকরণ হয়েছে ভগবান শ্রীবিষ্ণুর হস্তধৃত চারটি অস্ত্র ➡ শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্মের নামানুসারে। পুরীধাম শঙ্খক্ষেত্র, ভুবনেশ্বর চক্রক্ষেত্র, যাজপুর গদাক্ষেত্র এবং কোণার্ক বা কোণারক হচ্ছে পদ্মক্ষেত্র নামে পরিচিত।
নৃসিংহ ক্ষেত্রঃ
স্কন্দপুরাণ অনুসারে পুরী ধাম নৃসিংহ ক্ষেত্র নামে খ্যাত।
মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন শ্রীমন্দিরের নির্মাণকার্য সমাপন করে মন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ব্রহ্মাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ব্রহ্মলোকে গিয়েছিলেন। ব্রহ্মা সেখানে যজ্ঞ সম্পাদন করেন। ঐ যজ্ঞ থেকে ভগবান নৃসিংহদেবের এক ভয়ঙ্কর মূর্তি প্রকটিত হল। ভগবানের মস্তকের উপর সপ্তফণাযুক্ত অনন্তনাগ শোভা পাচ্ছিল এবং তিনি তাঁর ক্রোড়ে লক্ষ্মীদেবীকে ধারণ করে ছিলেন মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন ভগবানের এই রূপ দর্শন করে ভীত হলেন। রাজার প্রতি সদয় হয়ে ভগবান তৎক্ষণাৎ শান্তমূর্তি শ্রীনারায়ণরূপ পরিগ্রহ করেন।