Guru Purnima 2022; গুরু পূর্ণিমা কি এবং কবে? কেন পালন করা হয়?

Guru Purnima 2022; গুরু পূর্ণিমা কি এবং কবে? কেন পালন করা হয়?

গুরু পূর্ণিমা কি?

উত্তরঃ গুরু পূর্ণিমা হলো আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথির আরেক নাম। এটি ব্যাস পূর্ণিমা তিথি নামেও পরিচিত। গুরু পূর্ণিমা হলো বৈদিক প্রথা, যার মধ্য দিয়ে শিষ্য তাঁর গুরুকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে থাকেন।

আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতে গুরু পূর্ণিমা তিথি পালিত হয়। এই দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন। কেননা এই তিথিতে পরাশর মুণি ও সত্যবতীর ঘরে ভগবানের শক্তাবেশ অবতার, বেদ বিভাজনকারী, মহাভারত আদি শাস্ত্রের রচয়িতা মহর্ষি বেদব্যাস আবির্ভূত হয়েছিলেন ত্রেতা ও দ্বাপর যুগের সন্ধিক্ষণে। তাই এই তিথিতে মহর্ষি বেদব্যাসের আবির্ভাব তিথি পালন করা হয় এবং গুরু পূজা করা হয়।

গুরু পূর্ণিমার গুরুত্ব

"গুরু" শব্দটি 'গু' এবং 'রু' এই দুইটি সংস্কৃত শব্দ দ্বারা গঠিত। এখানে 'গু' শব্দের অর্থ হলো 'অন্ধকার' এবং 'রু' শব্দের অর্থ হলো 'অন্ধকার দূরীভূত করা'। অর্থাৎ যিনি অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যান তিনিই গুরু। গুরু আমাদের মনে থাকা সকল প্রকার সংশয়, ভয়, সন্দেহ, অন্ধকার দূর করেন। 

এভাবেই গুরুর নামকরণ করা হয়েছে। - অদ্বয়তারক উপনিষদ, শ্লোক ১৬

Guru Purnima 2022; গুরু পূর্ণিমা কি এবং কবে? কেন পালন করা হয়?

২০২২ সালে গুরু পূর্ণিমা কবে?

গুরু পূর্ণিমা ২০২২ (বাংলা ১৪২৯)
২৮ আষাঢ় ১৪২৯, ১৩ জুলাই ২০২২, বুধবার

বাংলাদেশ সময়
তিথি শুরুঃ ১৩ জুলাই ২০২২, 04:30 AM
তিথি শেষঃ ১৪ জুলাই ২০২২, 12:36 AM

ভারতীয় (পশ্চিমবঙ্গ) সময়
তিথি শুরুঃ ১৩ জুলাই ২০২২, 04:00 AM
তিথি শেষঃ ১৪ জুলাই ২০২২, 12:06 AM

গুরু প্রণাম মন্ত্র

ওঁ অজ্ঞান-তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন-শলাকয়া।
চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।। ১
মন্ত্রঃ সত্যং পূজা সত্যং সত্যং দেবো নিরঞ্জনঃ।
গুরোর্বাক্যং সদা সত্যং সত্যমেব পরং পদম্।।২
অখন্ড-মন্ডলাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্।
তত্পদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।৩
পিতৃমাতৃ-সুহৃদ্বন্ধু-বিদ্যা-তীর্থানি দেবতা।
ন তুল্যং গুরুণা শীঘ্রং স্পর্শয়েৎ পরমং পদম্।।৪
গুরুর্ব্রহ্মা গুরুর্বিষ্ণুঃ গুরুর্দেবো মহেশ্বরঃ।
গুরুরেব পরং ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।৫
ধ্যানমূলং গুরোমূর্ত্তিঃ পূজামূলং গুরোঃ পদম্।
মন্ত্রমূলং গুরোর্বাক্যং মোক্ষমূলং গুরোঃ কৃপা।।৬
ব্রহ্মানন্দং পরম-সুখদং কেবলং জ্ঞানমূর্ত্তিম্।
দ্বন্দ্বাতীতং গগন-সদৃশং তত্ত্বমস্যাদি-লক্ষ্যম্।।
একং নিত্যং বিমলমচলং সর্ব্বদা সাক্ষিভূতম্।
ভাবাতীতং ত্রিগুণ-রহিতং সদ্গুরুং তং নমামি।।৭
ত্বমেব মাতা চ পিতা ত্বমেব।
ত্বমেব বন্ধুশ্চ সখা ত্বমেব।
ত্বমেব বিদ্যা দ্রবিণং ত্বমেব।
ত্বমেব সর্ব্বং মম দেবদেব।।৮

অর্থঃ

যিনি অজ্ঞান-অন্ধকারাচ্ছন্ন শিষ্যের চক্ষু জ্ঞানাঞ্জন-শলাকা দিয়া খুলিয়া দেন, সেই শ্রীগুরুদেবকে ভক্তিভরে প্রণাম করি।
মন্ত্র সত্য, পূজা সত্য, দেব নিরঞ্জনও সত্য; শ্রীগুরুদেবের বাক্যও সর্ব্বদা সত্য বলিয়া জানিবে এবং সেই পরমপদও সত্য।
যাঁহার দ্বারা অখন্ড-মন্ডলাকার এই চরাচর বিশ্ব পরিব্যাপ্ত রহিয়াছে, তাঁহার শ্রীপাদপদ্ম যিনি দর্শন করাইয়া দেন, সেই শ্রীগুরুদেবকে পুনঃ পুনঃ প্রণাম করি।
এই জগতে পিতামাতা, সুহৃৎ-বন্ধু, বিদ্যাবুদ্ধি, তীর্থসমূহ এবং দেবদেবী কেহই শ্রীগুরুদেবের সমতুল্য হইতে পারে না; যেহেতু শ্রীগুরুদেবই একমাত্র সেই পরম ব্রহ্মপদ শীঘ্র লাভ করাইয়া দিতে পারেন।
শ্রীগুরুদেবই ব্রহ্মা, গুরুই বিষ্ণু, গুরুই দেব মহেশ্বর, শ্রীগুরুই পরব্রহ্ম স্বরূপ; সেই শ্রীগুরুদেবকে পুনঃ পুনঃ ভক্তিভরে প্রণাম করি।
শ্রীগুরুমূর্ত্তিই সর্ব্বদা ধ্যান করা কর্ত্তব্য, শ্রীগুরুদেবের শ্রীপাদপদ্মই সর্ব্বদা পূজা করা উচিত, শ্রীগুরুদেবের বাক্যই মন্ত্র-স্বরূপ এবং শ্রীগুরুকৃপাই মুক্তি বা মোক্ষ লাভের একমাত্র উপায়।
যিনি ব্রহ্মানন্দ-স্বরূপ, পরম সুখদানকারী, নিলির্প্ত, জ্ঞান-মূর্ত্তি-স্বরূপ, যিনি সুখদুঃখাদি দ্বন্দ্বের অতীত, গগনসদৃশ উদার, ‘তত্ত্বমসি’ প্রভৃতি মহাবাক্যের লক্ষ্য-স্বরূপ, যিনি এক, নিত্য, বিমল, অচল, সর্ব্বদা সমস্ত কিছুর সাক্ষীস্বরূপ, ভাবাতীত ও ত্রিগুণাতীত, সেই পরব্রহ্মরূপী শ্রীশ্রীসদ্গুরুকে ঐকান্তিক ভক্তিভরে প্রণাম করি।
হে গুরুদেব, তুমিই আমার মাতা, তুমিই আমার পিতা, তুমিই বন্ধু, তুমিই সখা। তুমিই আমার বিদ্যাবুদ্ধি, তুমিই আমার ধনৈশ্বর্য্য সবই; শুধু তাহাই নয়, হে আমার প্রাণদেবতা, তুমিই আমার জীবনের যথাসর্বস্ব।

বৌদ্ধদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ?

হ্যাঁ। এই তিথিটি বৌদ্ধদের জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই তিথিতেই গৌতম বুদ্ধ বোধিজ্ঞান লাভের পর সারনাথে প্রথম, শিষ্যদের উপদেশ প্রদান করেন।

সনাতন পুরাণ মতে, ভগবান শিব বা মহাদেব হলেন আদি গুরু। সপ্তর্ষির সাতজন ঋষি হলেন তাঁর প্রথম শিষ্য। শিষ্য - অত্রি, বশিষ্ঠ, পুলহ, অঙ্গীরা, পুলস্ত, মরীচি এবং কেতু (নাম নিয়ে মতভেদ আছে)। শিব এই তিথিতে আদিগুরুতে রূপান্তরিত হন এবং এই সাতজন ঋষিকে মহাজ্ঞান প্রদান করেন। তাই এই তিথিকে গুরু পূর্ণিমা আখ্যা দেওয়া হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url