অপরা একাদশীর ব্রত কথা মাহাত্ম্য ২০২২ Apara Ekadashi 2022

আজ আমরা জানবো জৈষ্ঠ্য মাসের কৃষ্ণ পক্ষীয়া 'অপরা' একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য। বাংলা মাসের দ্বিতীয় মাস জৈষ্ঠ্যমাস। এই মাসের কৃষ্ণ পক্ষে যে একাদশী ব্রত পালন করা হয় তার নাম অপরা একাদশী।

একাদশীতে উপবাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে কেবল অনাহারে উপবাস করাটাই মুখ্য উদ্দেশ্য নয়, মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে গোবিন্দ বা শ্রীকৃষ্ণের প্রতি অধিক শ্রদ্ধা ও প্রেমপরায়ণ হওয়া। ‘উপ’ মানে নিকটে, ‘বাস’ মানে অবস্থান করা অর্থাৎ শ্রীহরির নিকটে অবস্থান করা। একাদশীর দিন উপবাস করার মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে, শারীরিক আবশ্যকতাগুলি খর্ব করে ভগবানের মহিমা কীর্তন এবং অন্যভাবে ভগবানের সেবা করে সময়ের সদ্ব্যবহার করা।

এবার চলুন এই ব্রত মাহাত্ম্য সম্পর্কে জেনে নিই...

অপরা একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য

'অপরা' একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য

মহারাজ যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণকে বললেন- হে কৃষ্ণ! জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশীর নাম কি এবং তার মাহাত্ম্যই বা কি, আমি শুনতে ইচ্ছা করি।আপনি অনুগ্রহ করে তা বর্ণনা করুন।

শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে মহারাজ! মানুষের মঙ্গলের জন্য আপনি খুব ভাল প্রশ্ন করেছেন। বহু পুণ্য প্রদানকারী মহাপাপ বিনাশকারী ও পুত্রদানকারী এই একাদশী ‘অপরা’ নামে খ্যাত। এই ব্রত পালনকারী ব্যক্তি জগতে প্রসিদ্ধি লাভ করে। ব্রহ্মহত্যা, গোহত্যা, ভ্রুণহত্যা, পরনিন্দা, পরস্ত্রীগমন, মিথ্যাভাষণ প্রভৃতি গুরুতর পাপ এই ব্রত পালনে নষ্ট হয়ে যায়।

যারা মিথ্যাসাক্ষ্যদান করে, ওজন বিষয়ে ছলনা করে, শাস্ত্রের মিথ্যা ব্যাখ্যা প্রদান করে, জ্যোতিষের মিথ্যা গণনা ও মিথ্যা চিকিৎসায় রত থাকে, তারা সকলেই নরকযাতনা ভোগ করে। এসমস্ত ব্যক্তিরাও যদি এই ব্রত পালন করে, তবে তারা সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়। ক্ষত্রিয় যদি স্বধর্ম ত্যাগ করে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যায়, তবে সে ঘোরতর নরকগামী হয়। কিন্তু সেও এই ব্রত পালনে মুক্ত হয়ে স্বর্গগতি লাভ করে।
 
মকররাশিতে সূর্য অবস্থানকালে মাঘ মাসে প্রয়াগ স্নানে যে ফল লাভ হয়; শিবরাত্রিতে কাশীধামে উপবাস করলে যে পুণ্য হয়; গয়াধামে বিষ্ণুপাদপদ্মে পিন্ডদানে যে ফল পাওয়া যায়; সিংহরাশিতে বৃহস্পতির অবস্থানে গৌতমী নদীতে স্নানে, কুম্ভে কেদারনাথ দর্শনে, বদরিকাশ্রম-যাত্রায় ও বদ্রীনারায়ণ সেবায়; সুর্যগ্রহণে কুরক্ষেত্রে স্নানে, হাতি, ঘোড়া, স্বর্ণ দানে এবং দক্ষিণাসহ যজ্ঞ সম্পাদনে যে ফল লাভ হয়, এই ব্রত পালন করলে অনায়াসে সেই সকল ফল লাভ হয়ে থাকে। এই অপরা ব্রত পাপরূপ বৃক্ষের কুঠার স্বরূপ, পাপরূপ কাষ্ঠের দাবাগ্নির মতো, পাপরূপ অন্ধকারের সূর্যসদৃশ এবং পাপহস্তির সিংহস্বরূপ। এই ব্রত পালন না করে যে ব্যক্তি জীবন ধারণ করে জলে বুদবুদের মতো তাদের জন্ম-মৃত্যুই কেবল সার হয়। 

অপরা একাদশীতে উপবাস করে বিষ্ণুপূজা করলে সর্বপাপ মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোকে গতি হয়। এই ব্রতকথা পাঠ ও শ্রবণ করলে সহস্র গোদানের ফল লাভ হয়। ব্রহ্মান্ডপুরাণে এই ব্রত মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url