মহাঅষ্টমীতে কুমারী পূজা কেন করা হয়? কোন শর্তে কুমারী পূজা এবং কী কী ফল পাওয়া যায়?

মহাঅষ্টমীতে কুমারী পূজা কেন করা হয়? কোন শর্তে দূর্গা পূজোতে কুমারী নির্ণয় করা হয়? কুমারী পূজোয় কী কী ফল পাওয়া যায়? 

দূর্গা পূজা, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এটি শারদীয় দুর্গোৎসব নামেও পরিচিত।  এই দূর্গা পূজোতে কুমারী পূজা করা হয়। এখানে কুমারী পূজা বিষয়ক তথ্য আলোচিত হয়েছে...

কুমারী পূজা

মহাঅষ্টমীতে কুমারী পূজা

কেন একজন মনুষ্য নারীকে দেবী সাঁজে সজ্জিত করে পূজো করা হয়? প্রথমেই বলে রাখি, এই কুমারী পূজো কিন্তু সব মন্দিরেই করা হয় না। কিছু মন্দিরে লক্ষ্য করা যায় কুমারী পূজোর প্রচলন রয়েছে। কেন এই কুমারী পূজা করা হয় সেই বিষয়ে চলুন জেনে নিই...

দেবী ভাগবতে বর্ণিত আছে, দূর্গা পূজোর একটি বিশেষ অংশ হলো কুমারী পূজা। মহা অষ্টমীতে এই কুমারী পূজা করা হয়। মনে করা হয়, কুমারী পূজা ভক্তির সর্বোচ্চ একটি পর্যায়, যেখানে মা দূর্গার শক্তি বা প্রকাশ প্রত্যেকটি নারীর মধ্যে আছে বলে বিশ্বাস করা হয়। সব নারীতে মাতৃরূপ উপলব্ধি করাই কুমারী পূজোর মূল উদ্দেশ্য বলে বিবেচিত হয়। মা শুধু মৃন্ময়ী বিগ্রহের মধ্যেই নয়, মা দূর্গার অবস্থান প্রতিটি মায়ের মধ্যে অর্থাৎ প্রত্যেক নারীর মধ্যে। এই ধারণাকেই কেন্দ্র করে একজন মেয়েকে দূর্গা রূপে সজ্জিত করে পূজা করা হয়।

কুমারী পূজা করা হয় যেসব মেয়েদের, তাদের বয়স সীমা ২ বছর থেকে ১৬ বছর। কিন্তু উল্লেখ্য, ঋতুবতী অবস্থায় কোনো মেয়েকে কুমারী পূজার জন্য বিবেচনা করা হয় না। এজন্য দেবী পুরাণে বলা আছে, ২ থেকে ১০ বছরের কুমারীকেই পূজা করা উচিত।

বয়স ভেদে কুমারীদের নামও বর্ণনা করা হয়েছে শাস্ত্রে। চলুন জেনে নিই...

  • ২ বছরের কুমারীকে সরস্বতী,
  • ৩ বছরের কুমারীকে ত্রিধা মুর্তি,
  • ৪ বছরের কুমারীকে কালিকা,
  • ৫ বছরের কুমারীকে সুভগা,
  • ৬ বছরের কুমারীকে উমা,
  • ৭ বছরের কুমারীকে মালিনী,
  • ৮ বছরের কুমারীকে কুম্ভিকা,
  • ৯ বছরের কুমারীকে কালসন্দর্ভা এবং
  • ১০ বছরের কুমারীকে অপরাজিতা বলা হয়।

কুমারী পুজোয় বিভিন্ন ফল

  • দুই বছর বয়সের কুমারীকে পুজো করলে দুঃখ, দারিদ্র্য ও শত্রু নাশ এবং ধন ও আয়ু বৃদ্ধি।
  • তিন বছর বয়সের কুমারীকে পুজো করলে আয়ু বৃদ্ধি, ধনাগম ও বংশবৃদ্ধি।
  • চার বছর বয়সের কুমারীকে পুজো করলে বিদ্যা, বিজয়, রাজ্য লাভ।
  • পাঁচ বছর বয়সের কুমারীকে পুজো করলে রোগনাশ হয়।
  • ছয় বছর বয়সের কুমারীকে পুজো করলে শত্রুনাশ হয়।
  • সাত বছর বয়সের কুমারীকে পুজো করলে ধনৈশ্বর্য্য লাভ হয়।
  • আট বছর বয়সের কুমারীকে পুজো করলে শত্রুদের মোহিত করা যায়।
  • নয় বছর বয়সের কুমারীকে পুজো করলে ঐহিক(ইহলোকের) দারিদ্র্য ও শত্রু বিনাশ হয়।
  • দশ বছর বয়সের কুমারীকে পুজো করলে পুজোয় অভীষ্ট সিদ্ধ হয়।

শাস্ত্রে ১০ বছরের কুমারীকেই পূজো করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতেই সার্বিক মঙ্গল সাধন হয়ে থাকে। অভীষ্ট সিদ্ধ হয়।

দূর্গা পূজার সময় আমরা জানি একটি বিশেষ স্থানের মাটি লাগে। আর তা হলো, পতিতালয়ের মাটি। এখানে মনে হতে পারে, পতিতালয়ের মাটি কেন প্রয়োজন? শুরুতে বলা হয়েছে যে, প্রতিটি নারীতেই মা দূর্গার অবস্থান। একজন পতিতা নারীও আদ্যাশক্তি মহামায়ার অংশ ভূতা। তাকে যেন অবহেলা না করা হয়, এজন্যই এই পতিতালয়ের মাটিও প্রয়োজন হয় দূর্গা পূজোতে।

আমরা প্রত্যেক মায়েদের মধ্যেই যেন আদ্যাশক্তি মহামায়াকে দর্শন করতে পারি এটাই প্রার্থনা। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url