মৃত্যুর সময় বুকের উপর গীতা রাখলে কি ফল হয়?

মৃত্যুর সময় বুকের উপর গীতা রাখলে কি ফল হয়?
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কেউ মারা গেলে বা দেহ ত্যাগ করলে আমরা দেখতে পাই যে, তার মুখে চরণামৃত দেওয়া হয়। চোখের মধ্যে তুলসী পত্র দেওয়া হয় এবং তার বুকের উপর গীতা রাখা হয়। তো, অনেকেই প্রশ্ন করেন, মৃত্যুর পর কারো বুকের উপর গীতা রাখলে কি ফল লাভ হয়??
আমরা জানি,এই গীতা হলো পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাণী। যেটি সমগ্র মানব জাতির কল্যাণের জন্য ভগবান অর্জুনকে উদ্দেশ্য করে এই জ্ঞান প্রদান করেছেন।
মৃত্যুর সময় বুকের উপর গীতা রাখলে কি ফল হয়?
প্রকৃতপক্ষে, এই গীতাটা মৃত্যুর জন্য নয়। গীতা হলো বেঁচে থাকার জন্য। উদাহরণ সরূপ আমরা যখন কোনো একটি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস কিনি তখন এর সাথে একটি ম্যানুয়াল বা ব্যবহার বিধি দেওয়া হয়।এই ডিভাইসটাকে আমরা কিভাবে পরিচালনা করবো এর জন্যই এটি দেওয়া হয়।
যেমনঃ নতুন একটি মোবাইল ফোন কিনলে আমরা দেখতে পাবো যে,এর সাথে ব্যবহার বিধি দেওয়া হয়েছে।এটির মাধ্যমে মোবাইল ফোনটা খুবই সুদক্ষ ভাবে পরিচালনা করা যায়।
ঠিক, তদ্রূপ কুরুক্ষেত্রর রণাঙ্গনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে উদ্দেশ্য করে এই গীতা বা ব্যবহার বিধি মানবজাতির  উদ্দেশ্য প্রদান করেছেন। কিভাবে একজন মানুষ তার জীবনকে পরিচালনা করতে পারবে অর্থাৎ একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান হচ্ছে শ্রীমদভগবদগীতা।
গীতা প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুর জন্য নয়।একজন ব্যক্তির জীবনকে সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্যই মূলত শ্রীমদভগবদগীতা এবং এই শ্রীমদভগবদগীতায় ভগবান জ্ঞান দান করলেন যে,আমরা জড় দেহ নই।আমরা চিন্ময় আত্মা।এই রকম জ্ঞান আমরা শ্রীমদভগবদগীতা থেকে লাভ করতে পারি।কিভাবে আমরা মন নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।কিভাবে আমরা দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করতে পারি।কিভাবে আমরা কর্ম করেও ভগবানের সাথে যুক্ত থাকতে পারি।কিভাবে আমাদের কর্মকে ভগবানের প্রতি সমর্পণ করতে পারি।আমরা সংসারে থেকেও আমরা কিভাবে দঃখ থেকে,কষ্ট থেকে,হতাশা থেকে মুক্তি হতে পারি। 
এই সমস্ত জ্ঞান পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদভগবদগীতায় দান করেছেন। 
অনেকই আমরা গীতা ক্রয় করে লাল কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখি এবং পূজা করি। অবশ্যই এটি ভালো।কিন্তু মূল সমস্যা হলো আমরা গীতা পড়ি না। আমরা অনেকেই আবার নানান অজুহাত দেখায়।যেমনঃ আমি স্নান করি নি, আমি অপবিত্র; আমি কিভাবে গীতা পড়বো? এইরকম নানা অজুহাত দেখিয়ে আর গীতা পড়া হয় না।কিন্তু গীতা ভগবান দিয়েছেন আমাদের বেঁচে থাকরা জন্য।
আমরা এই গীতা অধ্যয়ন করে সেই গীতার তাৎপর্য আমরা আমাদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারলেই আমরা ভালো ভাবে চলতে পারবো।আমরা সহজেই কিছুতে বিচলিত হবো না।
এবং আমরা দেখতে পাই যে, শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের কৃপায় এই গীতা ভাষ্য খুবই অত্যন্ত সরল ভাবে প্রাঞ্জল ভাষায় তাৎপর্য লিখেছেন। যা আমরা খুবই সহজ ভাবে অনুধাবন করতে পারি। 
বর্তমান পৃথিবীর প্রায় ৮০ টির অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই  শ্রীমদভগবদগীতাকে পাঠ্য হিসেবে পড়ানো হচ্ছে। 
অর্থাৎ আমরা বুঝতেই পারছি যে, এই শ্রীমদভগবদগীতা পাঠ করে আমরা আমাদের জীবনকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে পারি।

তাই আসুন, মৃত্যুর পরে বুকের উপর গীতা রাখার আগে বেঁচে থাকতে গীতাকে হৃদয়ঙ্গম করি,গীতাকে মানবজীবনে প্রয়োগ করি।
যদিও বুকের উপর গীতা রাখলে অবশ্যই ফল পাওয়া যায়,কারণ গীতা হলো পবিত্র গ্রন্থ যা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাণী।

আমরা প্রতিদিন কিছু সময় নিয়ে, একটি করে শ্লোক পড়তে পারি। সবাইকে গীতা পড়াতে উৎসাহিত করতে পারি। আসুন, মানবজীবনকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করি।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url