চাতুর্মাস্য ব্রত কী ; করনীয় ও বর্জনীয়। জেনে নিন বিস্তারিত...
চাতুর্মাস্য ব্রত কী- করনীয় ও বর্জনীয়। জেনে নিন বিস্তারিত...
গৌড়ীয় বৈষ্ণব জীবনে চাতুর্মাস্য ব্রত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রথযাত্রার পরেই শয়ন একাদশী থেকে এই ব্রত পালন করা হয়। বঙ্গদেশের বৈষ্ণবগণ রথযাত্রার আগেই সদলবলে পুরী ধামে পৌঁছে যেতেন। আর সেখানে রথযাত্রা শেষ করে ফিরে আসতেন না। তারা মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের সাথে চাতুর্মাস্য ব্রত পালন শেষে নিজ দেশে ফিরে আসতেন। এবিষয়ে চৈতন্য চরিতামৃতের মধ্যলীলায় বর্ণিত আছে-
এ চারটি মাস জগন্নাথের নানারকমের উৎসবে তারা শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভুর সঙ্গে অংশগ্রহণ করতেন।
উত্থান একাদশীর পর রাসপূর্ণিমায় চাতুর্মাস্য সমাপন পূর্বক তারা স্ব স্ব গৃহে ফিরে আসতেন।
বাংলা বছরের ৪র্থ,৫ম,৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাস হলো যথাক্রমে শ্রাবণ,ভাদ্র,আশ্বিন এবং কার্তিক। এই চার মাসে শাস্ত্র অনুযায়ী কিছু নিয়ম পালন করতে হয়। এই চার মাসে যে ব্রত পালন করা হয় তাকেই আমরা চাতুর্মাস্য ব্রত নামে জানি। বছরের এই চার মাসে প্রাকৃতিক কারণে মানুষের দেহ ও মনে রজো এবং তমোগুণ এর প্রভাব অধিক দেখা যায়। এই সময়ে অঘটন বা দূর্ঘটনা বেশি দেখা যায়। এইজন্য শাস্ত্র অনুযায়ী এই চার মাসে কায়মনোবাক্যে সংযত থাকাটা উত্তম। তাই শাস্ত্রে এই চার মাসে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কৃষ্ণ ভক্তগণ কৃষ্ণ ভক্তি বৃদ্ধির জন্য চাতুর্মাস্য ব্রত নিয়ম পালন করেন।
চাতুর্মাস্য ব্রতের মাধ্যমে অনেকগুলো কর্মকান্ডীয় ফল পাওয়া যায়। যেমন, এই চারমাসে লবণ বর্জনকারী মধুর কণ্ঠস্বর, তৈল বর্জনকারী দীর্ঘায়ু সন্তান, যোগাভ্যাসী ব্রহ্মপদ, শ্রীবিষ্ণুর গীতবাদ্যকারী গন্ধর্বলোক প্রভৃতি প্রাপ্ত হয়।
শ্রীহরিভক্তিবিলাসে (১৫/১১৩)বলা হয়েছে-
"চতুর্মাসেষু কর্তব্যং কৃষ্ণভক্তি বিবৃদ্ধয়ে"
তাই আসুন, এই চাতুর্মাস্য ব্রত পালনের নিয়ম গুলো জেনে নিই-
- বেশি বেশি করে কৃষ্ণ নাম স্মরণ। অর্থাৎ অধিক হরি নাম জপ, কীর্তন এবং সেবা।
- প্রতিদিন শ্রীমদভগবদগীতা শ্রবণ এবং পাঠ করা।ভাগবত কথা সাধু মুখে শ্রবণ কীর্তন করা।
- তর্ক,গাল-গল্প, আড্ডা, ঝগড়া-বিবাদ ইত্যাদি না করা।
- প্রতিদিন প্রত্যূষে স্নান করা। অর্থাৎ ব্রহ্ম মূহুর্তের পূর্বে শয্যা ত্যাগ করে স্নান সেড়ে যথাসম্ভব মঙ্গল আরতি করা।
- শ্রাবণে মাসে শাক,ভাদ্র মাসে দই, আশ্বিন মাসে দুধ এবং কার্তিক মাসে মাসকলাই ডাল,বেগুন,বরবটি, শিম খাওয়া চলবে না। কারণ এই সময়ে এই খাবার গুলো মানবদেহে নানা রকম রোগ সৃষ্টি করে। মনকে বিক্ষিপ্ত করে। শ্রীব্রহ্মাও নারদমুনিকে বলেছেন, হে নারদ, চাতুর্মাস্য ব্রত ভক্তি সহকারে পালন করলে মানুষ পরমাগতি লাভ করার সুযোগ পাবে।এবিষয়ে স্কন্দ পুরাণে বর্ণিত আছে,
- বলা হয়ে থাকে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। তাই আমাদের উচিত সবসময় হরিভক্তিমূলক সেবায় নিয়োজিত থাকা। বেশি বেশি কৃষ্ণ নাম জপ করা।
চাতুর্মাস্য ব্রত কখন/কবে থেকে শুরু?
- কেউ শয়ন একাদশী থেকে উত্থান একাদশী পর্যন্ত
- কেউ আষাঢ় মাসের গুরু পূর্ণিমা থেকে কার্তিক মাসের হৈমন্তী রাস পূর্ণিমা পর্যন্ত
- কেউ আবার কর্কট সংক্রান্তি থেকে মকর সংক্রান্তি পর্যন্ত পালন করে থাকেন।
আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের শয়ন একাদশীতে ভগবান শ্রীবিষ্ণু শয়ন গ্রহণ করেন। ভাদ্র মাসের শুক্ল পক্ষের পার্শ্ব একাদশীতে ভগবান শয়নের পার্শ্ব পরিবর্তন করেন এবং কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের উত্থান একাদশীতে উত্থিত হন।
বলা হয়,চার মাস বিষ্ণু শায়িত থাকেন। মানুষ এই ব্রত করলে বিষ্ণুর সুখ নিদ্রা হয়। বিষ্ণুর পাদপদ্ম সেবায় রত থাকা শ্রীমতি লক্ষ্মীদেবী তখন ব্রতকারীদের প্রতি প্রসন্ন হন। তখন শ্রীমতি লক্ষ্মীদেবীর তুষ্ট দৃষ্টিপাতের ফলে ব্রতকারী লক্ষ্মীমন্ত হয়।
অন্যথায়, যদি কেউ ব্রত পালন না করে তাহলে বিষ্ণুর নিদ্রা বিঘ্নিত হয়। বিষ্ণুর পাদপদ্ম সেবায় রতা শ্রীমতি লক্ষ্মীদেবী তখন অনুভব করেন যে, লোকেরা ব্রতহীন ও উচ্ছৃঙ্খল হওয়ার ফলে প্রভুর নিদ্রা বিঘ্নিত হচ্ছে। তখন লক্ষ্মীদেবী ব্রতহীনদের প্রতি রুষ্ট হন।তাঁর এই রুষ্ট দৃষ্টির ফলে লোকে লক্ষ্মীছাড়া হয়। তখন জীবনে নানা রকমনের দুর্বিপাক লেগে থাকে।
অর্থাৎ এভাবে চার মাসে এই চাতুর্মাস্য ব্রত পালন করলে সুখে জীবন যাপন হবে।অন্যথায় দুঃখের প্রভাব বৃদ্ধি হবে,অনাবৃষ্টি ও অন্যান্য দুর্বিপাক লেগে থাকবে।
এইরকম তথ্য নির্ভর আরো পোস্ট পেতে নিয়মিত ভিজিট করুন । এই সকল তথ্য সবাইকে জানাতে শেয়ার করুন। হরেকৃষ্ণ 🙏